আমরা লাইভে English শুক্রবার, মার্চ ২৪, ২০২৩

সাংবাদিক অর্নব গোস্বামিকে কেন গ্রেফতার করলো পুলিশ?

why-police-arrested-journalist-arnab-goswami-1024x538-1

ভারতের বিশিষ্ট টিভি অ্যাঙ্কার অর্নব গোস্বামিকে বুধবার মুম্বাই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। রিপাবলিক টিভি লাইভ দেখিয়েছে যে, পুলিশ সাংবাদিকের বাড়িতে ঢুকে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। তাকে পরে পুলিশ ভ্যানে তোলা হয় বলে স্ক্রল.ইন জানিয়েছে। 

২০১৮ সালে কনকর্ড ডিজাইন্স প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনভয় নায়েক মারা যান। সেই মামলাতেই গোস্বামিকে গ্রেফতার করা হলো। নায়েক একটি সুইসাইড নোটে তার মৃত্যুর জন্য গোস্বামিসহ ফিরোজ শাইখ ও নিতেশ সারদা – এই তিনজনকে দায়ি করে যান। তারা তার পাওনা ৫.৪০ কোটি রুপি দেয়নি বলে নোটে লেখা ছিল। আলিবাউগে কাভির গ্রামে নিজ বাসায় নায়েক আর তা মা কুমুদ নায়েককে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। 

মামলার এফআইআরে বলা হয়েছে, এআরজি আউটলায়ার কোম্পানি – রিপাবলিক টিভি যাদের মালিকানাধীন – সেই কোম্পানিতে কর্মরত গোস্বামি বোম্বে ডাইং স্টুডিও প্রকল্পের জন্য ৮৩ লাখ রুপি পরিশোধ করেননি। আঁধেরির প্রকল্পের ৪ কোটি রুপি দেননি শেখ, এবং স্মার্ট ওয়ার্কের মালিক সারদা তার বানের ও মাগারপাত্তার প্রকল্পের জন্য ৫৫ লাখ রুপি পরিশোধ করেনি। 

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, ভারতের রিপাবলিক টিভি ও তাদের ব্যবস্থাপনা কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো তারা ‘গরিবদের মাসে সামান্য কিছু ডলার দিয়ে রেটিং সিস্টেমে কারচুপির মাধ্যমে তাদের টেলিভিশন চালু রেখেছে”।

রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ভারতীয় সাংবাদিক অর্নব রঞ্জন গোস্বামি রিপাবলিক মিডিয়া নেটওয়ার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এডিটর ইন চিফ। সম্প্রতি তিনি ক্ষমতাসীন সরকার ও মুম্বাই পুলিশের সমালোচনা করেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “ক্ষমতা থাকলে আমার বাসায় আসো, আমার অফিসে আসো। এসে আমাকে গ্রেফতার করো!” মুম্বাই পুলিশের প্রধান পরম বির সিংকে তিনি ‘মেরুদণ্ডহীন মানুষ’ এবং ‘কোমল অস্ত্র’ হিসেবেও উল্লেখ করেন। 

ভারতে সাংবাদিকদের উপর সাম্প্রতিক হামলার পর মিডিয়া ও নাগরিক সমাজের সদস্যরা সার্বক্ষণিক হুমকির মধ্যে আছে। মহামারীর মধ্যে পুলিশ পরিকল্পিতভাবে মুসলিমদের টার্গেট করে হেনস্তা করেছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। একজন বিশ্লেষক জিভিএসকে বলেন, “আমরা দেখেছি কিভাবে ভারত সরকার মিডিয়া ও নাগরিক সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করে নিজেদের আদর্শের কর্মসূচি প্রচারের চেষ্টা করেছে”।

অর্নব গোস্বামি তার ইসলামবিরোধী বক্তব্যের জন্য কুখ্যাত। রিপাবলিক টিভিতে গোস্বামি সম্প্রতি প্রশ্ন করেছিলেন, “লকডাউনের সময় শুধু মসজিদগুলোর কাছেই কেন মানুষের ভিড় হচ্ছে?”

বিশ্ব কি ভারতকে পরিত্যাগ করছে?

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতে গণতন্ত্রের চর্চা হারিয়ে যাওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকেও তারা বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করেছে। এটা উল্লেখ্য যে, মোদি সরকারের মুসলিম বিরোধী নীতির কারণে আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক মার্কিন কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ) ভারতকে আবার ‘কান্ট্রি অব পার্টিকিউলার কনসার্ন (সিপিসি)’ তালিকায় নিয়ে গেছে। 

সুনির্দিষ্ট ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের ঘটনা উল্লেখ করে কমিশনের রিপোর্টে মার্কিন সরকারের প্রতি সুপারিশ করা হয়েছে যাতে মার্কিন সরকার ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের সাথে জড়িত ভারত সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে এবং যুক্তরাষ্ট্রে তাদের প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। 

ভারতে এমনকি কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেও একেবারে সরকার পর্যায় থেকে মুসলিম ও ইসলামবিরোধী অব্যাহত অপপ্রচার চালানো হয়েছে। অনুসন্ধানী সাংবাদিক রানা আইয়ুব ওয়াশিংটন পোস্টে লিখেছেন, “ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমনের জন্য একমাত্র দায়ি করা হচ্ছে মুসলিমদের”।

গার্ডিয়ানের রিপোর্টে বলা হয়েছে, “ভারতের মুসলিমরা দেখছেন সারা দেশে তাদের ব্যবসা বয়কট করা হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরণের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। দিল্লী, কর্নাটক, তেলেঙ্গানা, এবং মধ্য প্রদেশের মতো রাজ্যে মুসলিমদের অনেক জায়গায় যেতে দেয়া হচ্ছে না”।

ফলে ভারতের অনেক বন্ধু রাষ্ট্র – যাদের মধ্যে মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশ রয়েছে – তারা শুধু এই পরিস্থিতির নিন্দা করে কড়া বিবৃতিই দেয়নি, বরং এই নির্যাতন বন্ধ করতে ভারতের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে।