আমরা লাইভে English মঙ্গলবার, জুন ০৬, ২০২৩

ভেঙ্গে পড়ছে আফগান ‘শান্তিচুক্তি’?

যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তি’ অনেক দিক দিয়ে ঐতিহাসিক। তবে আফগানিস্তানে সত্যিকারের শান্তিটি চুক্তি ঘোষণার পর থেকেই তা দেশটির জটিল ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ৫,০০০ বন্দিকে মুক্তি দিতে রাজি নয় ঘানি প্রশাসন। অন্যদিকে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা শুরু করে দিয়েছে তালেবান। এতে বুঝা যায় সশস্ত্র গ্রুপটি লড়াই চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক।

কথিত ‘চুক্তিটি’ শুধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে ‘শান্তি’র পথে নিয়ে যাবে না, প্রত্যাশা মতো এটা প্রমানিত হয়েছে হয়েছে যে এটি খুবই ভঙ্গুর, যা দেশটিতে পুরোদস্তুর যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা তৈরি করেছে।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ১০ মার্চ আন্ত:আফগান সংলাপ শুরু হচ্ছে না, এটা স্পষ্ট। আলোচনা শুরু করার পথে বড় ফাঁক হয়ে দাঁড়িয়েছে তালেবান বন্দিমুক্তি।

চুক্তিতে বন্দিমুক্তির কথা থাকলেও এ ব্যাপারে ঘানি প্রশাসনকে আস্থায় নেয়া হয়নি বলে মনে হচ্ছে। তাই বন্দিমুক্তি দিতে ঘানির অস্বীকৃতির মানে হলো তিনি আন্ত:আফগান আলোচনাও শুরু করতে চান না।

মার্কিন আর্থিক ও সামরিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীল ঘানির পক্ষে এই ঘোষণায় স্থির থাকা সম্ভব নাও হতে পারে। কিন্তু মনে হচ্ছে তালেবানরাও কাবুলের সঙ্গে কথা বলতে চায় না। ২৯ ফেব্রুয়ারি যেদিন দোহায় শান্তিচুক্তি সই হয় সেদিনই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। তালেবানের শের আব্বাস স্তানেকজাই এক সাক্ষাতকারে জোর দিয়ে বলেন, ‘আফগানিস্তানে এখন কোন সরকার নেই কারণ নির্বাচন স্বচ্ছ ছিলো না এবং ভোট পড়েছে খুবই কম।’

অন্যদিকে ঘানি প্রশাসন পাকিস্তানের সঙ্গে তালেবানের ‘সম্পর্ক’ ছিন্ন করার দাবি জানিয়ে আরেকটি চাল চেলেছে। যে দেশটি যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান চুক্তির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে তার ব্যাপারে এরকম দাবি জানানো পরিহাসেরও বটে। আবার, আফগানিস্তানের রাজনৈতিক দৃশ্যপট এতটাই জটিল যে একটি নিষ্পত্তিতে উপনীত হওয়া ও স্থায়ী শান্তি অর্জনের জন্য প্রত্যেক রাজনৈতিক নটকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা দরকার।

ঘানি প্রশাসনকে পাশ কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বন্দিমুক্তির দাবি জানাতে পারে তালেবান। এই দাবি পূরণ না হলে নিশ্চিতভাবেই চুক্তির অন্যান্য অংশ প্রভাবিত হবে।

আন্ত:আফগান আলোচনা শুরু বা এটি সফল হওয়ার উপর মার্কিন প্রত্যাহার বা আফগানিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক উপদলের মধ্যে রাজনৈতিক নিষ্পত্তির বিষয়টি নির্ভর করবে না। কিন্তু এমন কোন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যখন আফগানরাই থাকবে না, তখন অন্যান্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘দায়িত্বশীল’ প্রত্যাহারের দাবি করতে পারে। তখন সেনা সরিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্রই দেরি করবে।

প্রত্যাহারে বিলম্ব হলে তা যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে চুক্তির বিষয়গুলোকে জটিলতার দিকে ঠেলে দেবে। চুক্তি সই হলেও তালেবানরা সকল রাজনৈতিক বিষয় সমাধানের জন্য আফগানিস্তানের মাটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চূড়ান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে অনঢ় থাকবে।

২৯ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে তালেবান নেতা হেবাতুল্লাহ আখুনজাদা বলেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে ‘আফগানিস্তানে দখলদারিত্ব অবসানের’ যে কথা বলা হয়েছে সেটা তালেবানের ‘বিজয়’।

এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমলে নিতে হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এরই মধ্যে তালেবান নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাকে তালেবান বন্দিদের মুক্তির ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন। তবে আন্ত:আফগান আলোচনা শুরু হওয়ার পর যে অন্তবর্তীকালীন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে সেটা ঘানি শাসনের সমাধি রচনা করতে পারে বলে কাবুলের বর্তমান প্রশাসনের মধ্যে আশঙ্কা রয়েছে। এই আশঙ্কা দূর করতে ওয়াশিংটন এখনো কোন উপায় বের করতে পারেনি।

পুননির্বাচিত হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এখনো ঘানিকে অভিনন্দন জানায়নি। সেটাও ঘানি প্রশাসন জানে। তাই প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠান আয়োজনে বিলম্ব হয়।

আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থটি শুধু আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। যুক্তরাষ্ট্র তার নতুন ঘোষিত ‘মধ্য এশিয়া কৌশলের’ সঙ্গে আফগানিস্তানকে যুক্ত করতে চায়। আরো চায় সম্পদ সমৃদ্ধ মধ্য এশিয়ায় রাশিয়া ও চীনের প্রভাব মোকাবেলায় তালেবানের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে।

যুক্তরাষ্ট্র যদিও তালেবানকে এখনো ভবিষ্যতের মিত্র হিসেবে ঘোষণা করেনি কিন্তু ভবিষ্যতে ‘মধ্য এশিয়া কৌশলে’ অবশ্যই আফগানিস্তানের একটি ভূমিকা থাকবে। সেনাপ্রত্যাহর পরবর্তী দৃশ্যপটে তালেবানদের প্রাধান্য থাকবে বলে ধরে নেয়া যায়। ফলে ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতির অংশ হতে পারে তালেবান নেতৃত্বাধিন আফগানিস্তান।

এর মানে এই নয় যে তালেবান যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হবে। কিন্তু ভবিষ্যতে আফগানিস্তানের যখন ব্যাপক পুননির্মাণ প্রয়োজন হবে তখন নিজের প্রয়োজনেই ভবিষ্যৎ আফগান সরকার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সহায়তা চাইতে বাধ্য হতে পারে।

তবে এ সবকিছু ঘটবে যদি সবার আগে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটে। ঘানি শাসনের বিনিময়ে হলেও যুক্তরাষ্ট্রকে এই নিষ্পত্তি ঘটাতে হবে। আগেও আমি সাউথ এশিয়ান মনিটর-এ বিষয়টি উল্লেখ করেছি। যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান যে শান্তির অন্বেষণ করছে তার সামনে সবচেয়ে বড় বাধা এই ঘানি শাসন।